১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


বাংলাদেশ ‘ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে প্রগতির পথে’: ড. আতিউর রহমান

মোঃ রুবেল :“বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থেই ‘ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে প্রগতির পথে’ যাত্রা করে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। এই দেশ আজ অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে”- বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। আজ সুইজারল্যান্ড-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসবিসিসিআই) আয়োজিত একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় অধিবেশনে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার গুলশানে ফোর পয়েন্টস বাই শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট জনাব নকিব খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ সুইস দূতাবাসের হেড অফ পলিটিকাল, ইকোনমিক এন্ড কালচারাল এফেয়ার্স জনাব ক্রিস্টফ ফুখস; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এবং চেম্বারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
বাংলাদেশ অন্তর্ভূক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নয়ন সংক্রান্ত ধ্যান-ধারণায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন ড. আতিউর। তাঁর মতে একটি পার্সপেক্টিভ প্ল্যান (২০১০-২০২১) এবং সর্বশেষ দুটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিনিয়োগ-কেন্দ্রিক আর সম্পদ-নির্ভর পরিকল্পনার ধারা থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। সর্বশেষ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেশগতভাবে টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ড. আতিউর বলেন, বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের ভালো অবস্থান থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত গত এক দশকে সরকারের সুবিবেচনাপ্রসুত নীতি আর কৌশলের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। গত দশকে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৪০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই অনুপাত ছিলো ৭.৬৫ শতাংশ। মুদ্রস্ফীতিও এই সময়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫ শতাংশের কিছু বেশি। দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্যের হারও কমিয়ে যথাক্রমে ২৩ ও ১২ শতাংশে আনা গেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ১৯ শতাংশ মানুষ মধ্য ও উচ্চবিত্তের কাতারে থাকবে। এসব কিছু থেকে বোঝা যাচ্ছে যে একটি শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে যার উপর ভর করে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ড. আতিউর বলেন যে, কাংক্ষিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে সামনের দিনে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ফুরিয়ে আসতে থাকা জীবাশ্ম জ্বালানির উৎস, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মতো বেশ কিছু প্রতিবন্ধক অতিক্রম করতে হবে। তার মতে দেশের নীতিনির্ধারকদের- ডিজিটাইজেশন, এসএমই খাতের বিকাশ, গার্মেন্ট খাতের সবুজায়নসহ বেসরকারি খাতে আরও বেশি মাত্রায় বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি, কৃষির আধুনিকায়ন এবং উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের সংযোগ সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি ব্যবসা করা সহজ করে তোলার জন্য এবং বিশেষত বেশি হারে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
একশোটি বিশেষ আর্থিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ আরও যে বিপুল সংখ্যাক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প সরকার নিয়েছে সেগুলো সামনের দিনে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ড. আতিউর। এছাড়াও সরকার যেন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই টেকসই ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন কার্যক্রম অর্থায়ন করতে পারে- এজন্য ব্যাপকভিত্তিক ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিবেচনাপ্রসূত উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর আহ্বান জানান ড. আতিউর।

ফেইসবুকে চাটখিল নিউজ ২৪ ডট কম


Shares